বার্তা ডেস্ক :: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, কারো দল গোছানোর জন্য সময় দরকার, কারো বন্ধু জোগাড় করার জন্য সময় দরকার। কিন্তু তার জন্য জনগণের ভোট দেওয়ার যে মৌলিক মানবাধিকার বিলম্বিত হবে, এটা হতে পারে না।
শুক্রবার (১৬ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত ‘শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে মাওলানা মতিনের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে গত আগস্টে ঘোষিত এক দফার একটি পর্যায় ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তাদের দাবির অবশিষ্ট অংশ পূরণের আশায়। দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। অনেক তরুণ আছেন যাদের বয়স কম কিন্তু ভোটার হয়েছেন অনেকদিন আগে, তবুও আজ পর্যন্ত তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। তারা সেই অধিকার প্রয়োগ করতে চায়, রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজেদের মতামত জানাতে চায়।এটি তাদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অধিকার। এ অধিকার অর্জনের জন্যই হাজার হাজার মানুষ কারারুদ্ধ হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন, নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আজ এই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নানা মহলে নানা আলোচনা চলছে। আলোচনার বিস্তারে না গিয়ে আমি শুধু এতটুকুই বলব– আমরা বলেছি, লেবার পার্টি বলেছে যে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হোক। আমি এখানে উপস্থিত সাংবাদিক বন্ধুদের সামনে প্রশ্ন রাখতে চাই– যারা এর বিরোধিতা করছেন, তারা শুধু বলুন, কোন যুক্তিতে ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হওয়া উচিত? কারণটা কী?
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই বলেছে তারা জুন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো অসুবিধাই থাকার কথা নয়। অনেকে বলছেন, আগে সংস্কার করতে হবে। তাহলে প্রশ্ন আসে, আপনারা কবে থেকে সংস্কারের কথা বলছেন? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তো ১৯৭৬-৭৭ সালেই ১৯ দফা সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছিলেন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে অত্যন্ত সুবিন্যস্ত ২০৩০ ভিশন দিয়েছিলেন, যা ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা। এরপর ২০২২ সালে তারেক রহমান ২৭ দফা সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেটি সমৃদ্ধ করে আন্দোলনে যুক্ত সবার অংশগ্রহণে ২০২৩ সালে আমরা ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের কর্মসূচি ঘোষণা করি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা সংস্কারের বিপক্ষে নই, আমরা পরিপূর্ণভাবে সংস্কারের পক্ষে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে সংস্কার কি একবারেই সম্পন্ন করার বিষয়? পরিবর্তনের দুটি পথ– একটি বিপ্লব, অন্যটি সংস্কার। বৈপ্লবিক পরিবর্তন দ্রুত ঘটে যায় আর সংস্কার হয় একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, সবার সম্মতিতে বিশেষ করে যারা স্টেকহোল্ডার।
তিনি বলেন, অধ্যাপক আলী রিয়াজ জানিয়েছেন মে মাসের মধ্যেই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে– যে কোন কোন প্রস্তাবে সব দল একমত এবং কোন কোন প্রস্তাবে ভিন্নমত রয়েছে। যদি মে মাসের মধ্যেই এ বোঝাপড়া স্পষ্ট হয়ে যায়, তাহলে জুন মাসের মধ্যেই তা সংকলন করে একটি সনদ হিসেবে তৈরি করা সম্ভব, যাতে সব রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করবে, একমত হবে। যেসব সংস্কার তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব, তা আইনের বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকর হবে; যেগুলোর জন্য সংবিধান পরিবর্তন দরকার, তা নির্বাচিত সংসদে হবে। এ কাজ যদি জুনের মধ্যেও সম্ভব না হয়, জুলাইয়ের মধ্যেও হতে পারে। তাহলে প্রশ্ন হলো, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধাটা কোথায়?
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, জনগণের নির্বাচিত সরকার ধীর হতে পারে, ভুল করতেও পারে কিন্তু এর চেয়ে ভালো পদ্ধতি আজও আবিষ্কৃত হয়নি। তাই আমাদের এ পথেই এগোতে হবে– জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের সাথীরা, যারা জীবন দিয়েছেন, তারা এই গণতন্ত্রের জন্যই জীবন দিয়েছেন, জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছেন, ফ্যাসিবাদ উৎখাতের জন্য জীবন দিয়েছেন। সেই পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই আমাদের সামনে নতুন পরিবর্তনের সূচনা হবে। আর যারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে, অবহেলা করবে, তাদের প্রতিস্থাপনের ক্ষমতাও থাকবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই। আমরা সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই যুক্ত হতে চাই।
সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান ইরান, মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
Leave a Reply