নিজস্ব প্রতিবেদক।। নবীগঞ্জ উপজেলার জনতার বাজার বন্ধে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করান । ফলে নবীগঞ্জের বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মী ফেসবুকে লিখে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচার করেন। এর প্রেক্ষিতে দিনারপুর এলাকার কতিপয় জামাল আহমেদ নামে এক যুবক প্রশাসনের ওই মাইকিং’কে চ্যালেঞ্চ করে সে জানায় জনতার বাজার চলছে, চলবে। বাজার আছে, থাকবে। এছাড়া যারা মাইকিং করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুমকী দেন জামাল আহমেদ। তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে সর্বত্র তোলপাড় চলছে।
উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের জনতার বাজারে প্রতি শনিবার নিয়মিতভাবে বসছে অবৈধ পশুর হাট। জেলা প্রশাসনের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এই হাট বন্ধ হয়নি, বরং তা ঘিরে গড়ে উঠেছে কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য। ‘প্রত্যায়ন’ নামে বিক্রেতাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই। অভিযোগ রয়েছে, এই অবৈধ কার্যক্রমের পেছনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াতের প্রভাবশালী একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান ৭ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জনতার বাজার পশুর হাট অপসারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে লিখিত নির্দেশ দেন। এরপর ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ থেকে হাট পরিচালনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়, কেউ যদি সরকারি অনুমতি ছাড়া হাট পরিচালনা করে বা সহযোগিতা করে, তবে তা হাট-বাজার আইন ২০২৩ ও মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দেওয়া হবে।
তবে বাস্তবে এই নির্দেশনাগুলো কার্যকর হয়নি। প্রশাসনের নিস্কিক্রয়তা এবং রহস্যজনক নীরবতার সুযোগ নিয়ে জনতার বাজার পরিচালনা কমিটি গত চার মাসে অন্তত ১৫ বার অবৈধভাবে পশুর হাট বসিয়েছে। প্রত্যেকবারই গরু-ছাগল বিক্রয়ের সময় ‘প্রত্যয়ন’ নামে প্রতি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১,০০০ থেকে ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। প্রতি হাটে আদায় হচ্ছে আনুমানিক ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। স্থানীয় সূত্র বলছে, এ পর্যন্ত প্রায় কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, এই হাট পরিচালনায় সরাসরি জড়িত রয়েছেন দিনারপুর জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির সদ্য মনোনীত সভাপতি ও গজনাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাপরাধের মামলায় অভিযুক্ত আবুল খায়ের গোলাপ (জামিনপ্রাপ্ত), বীরপ্রতীক নুর উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা ও বাজারের সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল, আওয়ামী লীগ নেতা আজির উদ্দিন, কাজী জাহিদ, গজনাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শফিউল আলম বজলু, সহসভাপতি কাওছার আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের কায়েদ, গজনাইপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সহসভাপতি ও ইউপি সদস্য জাহেদ আহমদ এবং নজরুল ইসলামসহ সঙ্ঘবদ্ধ চক্র একসঙ্গে প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে অবৈধভাবে হাট বসিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
সব মিলিয়ে জনতার বাজার পশুর হাট এখন প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও কোটি টাকার অবৈধ অর্থ বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছে। এর থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা। এর প্রেক্ষিতে সড়ক,পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের ২৪ মে এক সিদ্ধান্তের আলোকে অবৈধভাবে পরিচালিত জনতার বাজার বন্ধের নির্দেশনা দিলে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামী শনিবার থেকে কোন ধরনের পশুর হাট জনতার বাজারে বসানো যাবে না মর্মে দিন ব্যাপী মাইকিং করানো হয়েছে। ওই মাইকিংয়ের কার্যকারিতা নিয়ে স্থানীয় লোকজন সন্দেহ পোষন করেছেন। এদিকে গজনাইপুর এলাকার জামাল আহমেদ নামে এক যুবক তার ফেসবুক আইডিতে একটি পোষ্ট করে বলেন, ওই মাইকিংয়ে বাজার বন্ধ হবে না। বাজার চলছে, চলবে, আছে থাকবে। যারা মাইকিং করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। গজনাইপুর গ্রামের আনসার আহমেদ নামে অপর এক যুবক তার ফেসবুক আইডিতে লিখেন, কিছু দিন আগে সাইনবোর্ড দেখে মজা পাইছেন। এখন মাইকিং শুনে মজা নেন। পার্থক্য শুধু এতটুকুই , জনতার বাজার আছে এবং থাকবে। মাঝে চক্রবৃদ্ধি হারের লেনদেন কিছু বাড়বে।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জনতার বাজার বন্ধ করা হয়েছে। কেউ প্রশাসনের মাইকিংকে চ্যালেঞ্চ করে থাকার বিষয়টি তদন্তক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply