ইনাতগঞ্জ বার্তা ডেক্সঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনে সংঘটিত সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিবেদনকে লতার প্রকাশিত ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অধিকার কর্মী ও বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এই প্রতিবেদনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের প্রমাণক হিসেবে উপস্থাপিত হবে। এর মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের কুশীলব ও পরিকল্পনাকারীদের বিচারের পথ প্রসারিত হয়
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনে মানবাধিকার, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মতপ্রকাশের অধিকার হারিয়েছে মানুষ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে যে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলেন, এটি তার দলিল।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
এম সফিউল্লাহ (সাবেক রাষ্ট্রদূত)
আন্দোলন দমাতে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। যারা এসব করেছে, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে। ভবিষ্যতে যেন কেউ এ ধরনের হত্যাকাণ্ডবাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমন্ত্রণে জাতিসংঘ গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশজুড়ে সংঘটিত ব্যাপক বিক্ষোভ এবং পরবর্তী সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপব্যবহারের অভিযোগ সম্পর্কে স্বাধীন ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং তদন্ত’ পরিচালনা করে। ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর তদন্ত শুরু করে দীর্ঘ পাঁচ মাস পরে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও নির্বিচার গুলির বিষয়টি উঠে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে গুম কমিশনের সদস্য এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির সদস্য নূর খান কালবেলাকে বলেন, এটা খুব স্পষ্ট যে, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড যারা করেছে-এর পেছনে যে কুশীলব, পরিকল্পনাকারী তাদের এই প্রতিবেদনে চিহ্নিত করা হয়েছে। আন্দোলন দমাতে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে, যারা এসব করেছে, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে। ভবিষ্যতে যেন কেউ এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটাতে না পারে, সেজন্য বিচারের মাধ্যমে সেটা নিশ্চিত করা হবে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে সরকার। আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। পুলিশ, প্রসিকিউটর, বিচারকসহ বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে আইনের শাসন সমুন্নত রাখার জন্য কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
অন্যদিকে অল ভিক্টিমস কোয়ালিশনের কো-ফাউন্ডার খন্দকার আব্দুর রাকিব গণমাধ্যমকে বলেন, আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে যে ভয়াবহ নৃশংসতা হয়েছে, সেটার একটি ঐতিহাসিক দলিল। বাংলাদেশে যে বিচার প্রক্রিয়া চলছে, তা প্রমাণক হিসেবে গৃহীত হবে। এই আন্দোলনে অনেকে যে মারা গেছে তা-ই নয়, এর সঙ্গে হাজারের ওপর ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে। এই প্রতিবেদনটা বিচার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ
হিসেবে উপস্থাপিত হবে। এটা জেনোসাইড না হলেও এটা হত্যাকাণ্ডকে ‘ম্যাস কিলিং’ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ বলা যায়। এসব হত্যাকাণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে রাজনৈতিক বাহিনীও ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে এটা খুবই সিস্টেমেটিক হত্যাকাণ্ড।
স্বাধীন এই তদন্ত দল ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ প্রমাণ পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সময়ে সাবেক সরকার এবং তার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী, আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট সহিংস গোষ্ঠীগুলো একসঙ্গে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত। প্রতিবেদন প্রকাশ সম্পর্কে অন্যান্য রাজনৈতিক দল, কূটনীতিক ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরাও মতামত ব্যক্ত করেছে।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু কালবেলাকে বলেন, জাতিসংঘ তো সঠিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই এই কথা বলেছে। তথ্য-প্রমাণ ছাড়া তো তারা বলেনি। আমরা যারা এ দেশে বসবাস করি, রাজনীতি করি, তারা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্টেই যে শুধু হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা তো নয়। ১৫-১৬ বছর ধরে তিনি (শেখ হাসিনা) এ দেশে অসংখ্য মানুষকে গুম করেছেন, নিখোঁজ করেছেন, বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছেন। এ ছাড়া ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমনে গণহত্যা চালিয়েছেন। সেটার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ যে বক্তব্য দিয়েছে, সেটাকে আমরা তথ্যভিত্তিক ও সঠিক বলে মনে করি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন কালবেলাকে বলেন, জাতিসংঘ যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এটা শেখ হাসিনাকে বিচার করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।
প্রতিবেদন প্রকাশকে স্বাগত জানিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সফিউল্লাহ বলেন, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনে মানবাধিকার, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মতপ্রকাশের অধিকার হারিয়েছে মানুষ। শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে যে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলেন, তার দলিল হিসেবে বহির্বিশ্ব এটি দেখতে পাবে। ঘটাতে না পারে
Leave a Reply