টানা বর্ষণ এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সীমান্তঘেষা নিম্নাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। গত বুধবার (২৮ মে) সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত ও ঢলের তীব্রতায় মোগড়া, মনিয়ন্দ ও দক্ষিণ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পানি উঠে যায়, ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন।স্থানীয়দের ভাষ্যে, এ বন্যা এতটাই আকস্মিক ছিল যে অনেক পরিবার প্রস্তুত হওয়ার আগেই পানিবন্দি হয়ে পড়ে। রাতের অন্ধকারে ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হয়েছে বহু মানুষকে। অনেকেই নিজের মালামাল রক্ষা করতে না পারায় ঘরবাড়ি ও খামারের ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
পানির তোড়ে তলিয়ে গেছে গ্রামের রাস্তাঘাট, বাজার, বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ। বহু কৃষকের শাকসবজির ক্ষেত, মাছের ঘের এবং পুকুর পানির নিচে চলে গেছে। বিশেষ করে আখাউড়া-আগরতলা সড়কের বন্দর এলাকার কিছু অংশেও পানি উঠে গেছে, যদিও এখনো যান চলাচল সচল রয়েছে।বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোগড়া, দক্ষিণ ইউনিয়ন এবং মনিয়ন্দ ইউনিয়নের গ্রামগুলো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- কালিকাপুর, বীরচন্দ্রপুর, আবদুল্লাহপুর, বঙ্গেরচর, রহিমপুর, সাহেবনগর, খলাপাড়া, উমেদপুর, সেনারবাদী, কুসুমবাড়ি, আওরারচর, ছয়ঘরিয়া, বাউতলা, দরুইন, বচিয়ারা, নোয়াপাড়া, নিলাখাত, টানুয়াপাড়া, ধাতুর পহেলা, চরনারায়নপুর ও আদমপুর, ইটনা, কর্নেল বাজারসহ প্রায় ২০টিরও বেশি গ্রাম।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট অফিস ও আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে ঢলের পানি ঢুকে কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও কাস্টমস হাউজেও পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে, যা সীমান্তপথে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই উপজেলা প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিএম রাশেদুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনীয় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন বিদ্যালয়কে সাময়িক আবাসন হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে জরুরি সহায়তা পৌঁছানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া স্থানীয় থানা পুলিশ, রাজনৈতিক দলের কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবীরা পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার ও আশ্রয়ে সহায়তা করছেন।
Leave a Reply