কামারপাড়ায় বাজছে টং টং আওয়াজ আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা

মাসুদ শিকদারঃ আগামীকাল বাংলাদেশ উৎযাপিত হবে মুসলমানদের ২য় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহা এলেই বদলে যায় নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজারের কামারপাড়ার চিত্র। বিশেষ করে নবীগঞ্জের ইমামবাড়ি, আউশকান্দি,বাংলাবাজার, ইনাতগঞ্জের বাজারের কামারপাড়া যেন কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টং টং শব্দে মুখরিত থাকে প্রতিটি কারখানা। কেউ লোহা গলাচ্ছেন, কেউ চিরচেনা ধাতব শব্দ তুলে ছুরি-চাপাতিতে ধার বসাচ্ছেন। কেউ যন্ত্রপাতিগুলো পরিষ্কার করছেন এমন ব্যস্ততা প্রতিটি কামার কারখানায়। শুধু ছুরি নয়, কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য তৈরি হচ্ছে চাপাতি, বটি, কুড়ালসহ নানা উপকরণ । পাশাপাশি পুরোনো যন্ত্রপাতি শান দেওয়ার কাজেও রয়েছে প্রচণ্ড ভিড়। প্রতিটি দোকানের সামনে ভিড় করছেন ক্রেতারা। কেউ পুরোনো ছুরি-চাপাতি শান দিচ্ছেন, আবার কেউ নতুন কিনে নিচ্ছেন। বিক্রিও বেড়েছে আগের তুলনায় কয়েকগুণ। আকার ও মানের ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি ছুরি বা চাপাতির দাম ২০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর শান দেওয়ার কাজের জন্য ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত টাকা দিতে হয়। ইনাতগঞ্জের কামার কারিগর রফিকুল ইসলাম বলেন, কোরবানির ঈদের আগেই মূল বেচাকেনা হয়। এখন প্রতিদিন ১৫-১৬ ঘণ্টা কাজ করছি। রাতেও কাজ থেমে থাকে না। সবাই ছুরি, চাপাতি, কুড়াল নিচ্ছেন কোরবানির জন্য।
আউশকান্দির হীরাগঞ্জ বাজারের প্রাণকৃষ্ণ জানান, ঈদের দুই সপ্তাহ আগে থেকেই চাপ বাড়ে । পুরোনো যন্ত্রপাতি শান দিতে প্রতিদিন কারখানায় ভিড় করেন অগণিত মানুষ। এজন্য আলাদা কর্মচারী নিয়োগও দিতে হয়েছে অনেক কারখানায়।
অনেক কামার জানান, এই এক মাসের আয়ের ওপরই অনেকাংশে তাদের সারা বছরের জীবিকা নির্ভর করে। ফলে ঈদকে সামনে রেখে বাড়তি মজুরি দিয়ে বাড়তি শ্রমিকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ দোকানের সামনে অস্থায়ী স্টল বসিয়ে কাজ করছেন। জুনায়েদ বলেন, আমরা যারা কোরবানি দেই, তারা মনে করি নতুন ছুরি চাপাতি দিয়ে মাংস কাটা উচিত। কারণ গত বছরেরটা জং পড়ে যায়। ফলে মাংস কাটতে সময় লাগে। আর এই কামার ভাইয়েরা তো সারা বছর আমাদের জন্যই অপেক্ষা করে। তাদের ও তো ঈদ আছে। আমরা সবাই নতুন নতুন ছুরি, চাপাতি কুড়াল না কিনলে ভাইদের পরিবার কেমনে ঈদ করবো। ঈদের সময় ছুরি-চাপাতির পাশাপাশি পশু টানার রশি, জবাইয়ের খুঁটি তৈরির লোহার অংশ, দাঁড়িপাল্লার কাঠি ইত্যাদির চাহিদাও বাড়ে বলে জানান দোকানিরা। কামারদের ওই কর্মব্যস্ততা ঈদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিককে সামনে আনে। তাদের তৈরি যন্ত্রপাতি ছাড়া কোরবানির ঈদের মূল কাজটিই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই এই সময়টা তাদের কাছে শুধু আর্থিক সুযোগ নয়, ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও বটে।