হবিগঞ্জ প্রতিনিধি।। হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে কয়েক বছর ধরে টিকে আছে বিরল প্রজাতির একটিমাত্র আসামি বানর। এই প্রজাতিটিকে ভারতের আসামে বেশি দেখা যায় বলে এমন নামকরণ করা হয়েছে। এই প্রজাতির বানর বাংলাদেশে প্রায় বিলুপ্ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাতছড়ি উদ্যানে থাকা এই বানরটি নিঃসঙ্গভাবে উদ্যানের স্টুডেন্ট ডরমেটরি ও রেস্টুরেন্টের আশেপাশে ঘুরছে। ব্যতিক্রম প্রজাতির হওয়ায় দেশীয় বানর কিংবা অন্য প্রাণীদের সাথে দলবদ্ধ হয়ে তেমন ঘুরতে পারে না। তাই প্রায়ই একে দলছুট থাকতে দেখা যায়। বন্যপ্রাণী সংশ্লিষ্টরা জানান, বানরটির জোড়া মেলানো প্রয়োজন। প্রয়োজনে ভারত বা অন্য দেশ থেকে কিছু এই প্রজাতির আসামি বানর এনে উদ্যানে অবমুক্ত করলে এই বানরটির জন্য প্রজননে সহায়ক হবে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায়ই বানরটিকে বিষন্ন অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যায়। অনেকে ছবি তুলে বিরক্ত করে বানরটিকে। আবার কেউ কেউ বানরটি শিকার কিংবা পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথাও জানান।
স্থানীয় বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, আসামি প্রজাতির বানরটি নিঃসঙ্গভাবে চলাফেরা করে। সম্ভাবনা রয়েছে, এটি দেশি প্রজাতির সাথে প্রজনন করে শংকর জাতের বানর উদ্ভাবন করতে পারে। তবে এটির জোড়া মেলানো প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, বিরল ও বিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী ‘আসামি বানর’। আসাম বান্দর বা বোঢ়া বানর নামেও পরিচিত এটি। ইংরেজি নাম আসামিজ/আসাম/হিমালয়ান ম্যাকাক। সারকোপিথেসিডি গোত্রের প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম Macaca assamensis। এই প্রজাতি বিশ্বব্যাপী সংকটাপন্ন। এরা বড় আকারের বানর। তবে অন্যান্য বানর প্রজাতির তুলনায় লেজ বেশ খাটো। নাকের আগা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৫১ থেকে ৭৩ সেন্টিমিটার। লেজ ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার। পুরুষ বানরের ওজন ১০ থেকে ১৪ কেজি এবং স্ত্রী বানরের ওজন ১০ থেকে ১২ কেজি। মাথা বড় ও বর্গাকার। মুখমণ্ডল চওড়া ও গাঢ় বাদামি থেকে লালচে। দেহের ওপরের লোমের রং বাদামি ধূসর, নিচের লোম সাদাটে ধূসর। আসামি বানর মিশ্র চিরসবুজ পাহাড়ি বনের বাসিন্দা। দিবাচর, বৃক্ষবাসী ও ভূমিচারী এই প্রাণী বেশ লাজুক। সচরাচর পুরুষ, স্ত্রী, বাচ্চাসহ ১০ থেকে ৫০টির দলে বাস করে। দলে একাধিক পূর্ণবয়স্ক পুরুষ থাকতে পারে। ফল, পাতা, ফুল, শস্যদানা, কীটপতঙ্গ, ছোট মেরুদণ্ডী প্রাণী ইত্যাদি খায়। গভীর বনের বাসিন্দা হলেও নেপাল ও ভারতে খাবারের জন্য ফসলের খেতে হানা দেওয়ারও তথ্য রয়েছে। নিচু ও মোলায়েম সুরে ‘পিউ পিউ’ স্বরে ডাকে।
এপ্রিল থেকে জুনে প্রজনন করে। স্ত্রী বানর পাঁচ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। ১৫৮ থেকে ১৭০ দিন গর্ভধারণের পর একটি বাচ্চা প্রসব করে। আয়ুষ্কাল প্রায় ১০-১২ বছর।
Leave a Reply