টাইগার মুরগি খামারে সফল শিউলি বেগম এখন গ্রামের নারীদের অনুপ্রেরণা

একটুখানি সাহস আর অদম্য পরিশ্রম-এই দুই হাতিয়ার নিয়ে শিউলি বেগম শুরু করেছিলেন তার পথচলা। আজ তিনি শুধু একজন খামার মালিক নন বরং গ্রামের সব বেকার নারীদের কাছে হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণা।শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়নের জমাদ্দার কান্দি গ্রামের শিউলি বেগমের ইউটিউবে দেখে আগ্রহ জন্মে টাইগার মুরগির খামার করার। স্বপ্ন দেখেন নিজেও একজন সফল উদ্যোক্তা হবেন।
স্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে পাশে দাঁড়ান তার স্বামী মহসিন জমাদ্দার। নারায়ণগঞ্জ থেকে নিয়ে আসেন টাইগার মুরগির বাচ্চা। প্রথম দিকে নানা চ্যালেঞ্জ ছিল। রোগব্যাধি, বাজারে খরচ, সঠিক খাবারের অভাব-সবই ছিল একটি নতুন উদ্যোক্তার জন্য বড় বাধা। কিন্তু হাল ছাড়েননি শিউলি বেগম। এখন তার খামারে রয়েছে প্রায় ৭শ টাইগার মুরগি। টাইগার মুরগি অত্যন্ত সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় একটি মুরগি আমাদের দেশে। টাইগার মুরগি দেশি সোনালী মুরগির সঙ্গে দ্রুত বর্ধনশীল জাতের মুরগির ক্রস করে তৈরি। এটি কোনো বিশেষ জাত নয়।খামারের পাশাপাশি এখন শিউলি বেগম নিজেই ইনকিউবেটর মেশিনের সাহায্যে ডিম থেকে বাচ্চা তৈরি করছেন। বর্তমানে তার ইনকিউবেটর মেশিনে টাইগার মুরগির বাচ্চা ফুটানোর জন্য রয়েছে প্রায় ১২০০টি ডিম। খামারটি পরিচালনার জন্য স্বামীর পাশাপাশি রয়েছে স্থানীয় একজন কর্মচারী। শিউলি বেগম এখন তার খামারের টাইগার মুরগি, টাইগার মুরগির ডিম এবং টাইগার মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে মাসিক আয় করছেন লাখ টাকার বেশি।খামারের কর্মী মো. ইব্রাহিম খলিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিউলি আপার খামারে কাজ করে আমি আমাদের সংসার চালাই। এই টাইগার মুরগি লালন পালন করা খুবই সহজ তাই আমি আপার থেকে কিছু টাইগার মুরগির বাচ্চা কিনে আমাদের বাড়িতে ছোট্ট একটি খামার করেছি। আমার স্বপ্ন শিউলি আপার থেকে কাজ শিখে আমার ছোট্ট খামারটি একদিন বড় খামারে রূপান্তরিত করব।
উদ্যোক্তা শিউলি বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউটিউব দেখার সময় টাইগার মুরগির একটি ভিডিও আমার সামনে আসে ভিডিওটি দেখার পর থেকেই স্বপ্ন দেখতাম উদ্যোক্তা হওয়ার। সেই ইচ্ছা থেকেই স্বামীকে টাইগার মুরগির বাচ্চা এনে দেওয়ার কথা বললাম। আমার স্বপ্ন পূরণ করতে নারায়ণগঞ্জ থেকে ৫শ মুরগির বাচ্চা এনে দেন। সেই টাইগার মুরগির বাচ্চা দিয়েই শুরু হয় আমার জীবন যুদ্ধ ধীরে ধীরে এখন টাইগার মুরগিসহ আমার খামারে ইনকিউবেটর মেশিনের সাহায্যে ডিম থেকে মুরগির বাচ্চা তৈরি করে বিক্রি করি। এখন আমার খামারের যাবতীয় খরচ এবং একজন কর্মচারীর বেতন দিয়েও প্রতি মাসে আমার লাখ টাকার বেশি আয় থাকে।শিউলির স্বামী মহসিন জমাদ্দার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্ত্রী শিউলি প্রায় এক বছর ধরে বায়না করে আসছিলেন টাইগার মুরগির খামার দেবেন বলে। তার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য প্রথমে আমি নারায়ণগঞ্জ থেকে তাকে ৫শ টাইগার মুরগির বাচ্চা এনে দেই। সেই বাচ্চা দিয়ে শুরু হয় তার জীবন যুদ্ধ। এখন সে সফল উদ্যোক্তা। আমাদের গ্রামের নারীরাও তাকে দেখে অনুপ্রেরণা পাচ্ছে এতে আমরা সবাই খুশি। প্রতি মাসে আমাদের খামার থেকে সকল খরচ বাদ দিয়ে লাখ টাকার মত আয় থাকে।
স্থানীয় এক গৃহবধূ আসমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিউলি আপাকে দেখে আমরা অনুপ্রেরণা পেয়েছি। কঠোর পরিশ্রম করলেই একজন মেয়েও হতে পারে বড় উদ্যোক্তা। তারই প্রমাণ শিউলি আপা। আমার ইচ্ছা তার থেকে টাইগার মুরগির বাচ্চা নিয়ে খামার করব।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু বকর সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের কর্মকর্তারা শিউলির খামারের নিয়মিত খোঁজখবর রাখে। তার মতো যদি কেউ মুরগি পালন করতে চান, তবে আমরা তার পাশে থাকব।