প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ওসমানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু নির্মাণের দেড় বছর পার হলেও এখনও মেলেনি সরকারি অনুমোদন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে সরকারি অনুমোদনের জন্য আবেদন করলেও এখনও তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে ঝুলে আছে বলে জানা গেছে। শুধু আবেদনই নয়, জনবল সংকট ও উপকরণ সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এই উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ।
অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যম জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালুর দাবি উপজেলাবাসীর। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনুমোদনের আবেদন বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের শেষদিকে ভবনগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বুঝিয়ে দিলেও প্রশাসনিক অনুমোদন ও জনবলের অভাবে হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ সেবা কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না। ফলে প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ।
২০১৪ সালে ওসমানীনগর থানাকে উপজেলা হিসেবে ঘোষণার পর উপজেলা কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলার গোয়ালাবাজার এলাকায় জায়গা অধিগ্রহণ করে ২০২০ সালের শেষদিকে ২৬ কোটি ৯৯ লাখ ৫১ হাজার ৬৬০ টাকা ব্যয়ে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের দায়িত্ব পায় মেসার্স পোদ্দার এন্টারপ্রাইজ ও রূপালী কন্সট্রাকশন। ২০২০ সালে নভেম্বরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবন নির্মাণ শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনের দিকে কাজ শেষ হয়। ৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবন, ডাক্তার ও নার্সদের ডরমিটরিসহ ১০টি বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ শেষে ২০২৩ সালের শেষদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সেগুলো হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ভবনগুলো গ্রহণের দেড় বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা চালু হচ্ছে না।
এদিকে, পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা চালু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলাবাসী। নিজ উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন হাসপাতাল থাকা সত্তে¡ও চিকিৎসাসেবার জন্য স্থানীয়দের ছুটতে হচ্ছে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সিলেট শহরে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালের অধীনে আউটডোর সেবা চালু রয়েছে। তবে ইনডোর চিকিৎসাসেবা চালু করতে হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এবং জনবল নিয়োগ প্রয়োজন। অনুমোদন ও জনবল নিয়োগ না পেলে ইনডোর চিকিৎসাসেবা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। কমপ্লেক্সে ৯ জন চিকিৎসকের প্রায়োজন থাকলেও সেখানে আছেন মাত্র ৩ জন। এর মধ্যে ২ জন কাজ করেন সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্স, মিড ওয়াইফ, ওয়ার্ড বয়, আয়া, নাইট গার্ডসহ ৪র্থ শ্রেণির কোনো জনবল নেই। হাসপাতালের অধীনে একটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ও চালক থাকলেও পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু না থাকায় তা কোনো কাজে আসছে না। এছাড়াও প্রয়োজনীয় ডাক্তার নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বারবার বলা হলেও শুধু আশার বাণী শোনানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে ওসমানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মইনুল আহসান বলেন, প্রশাসনিক অনুমোদন ও জনবল না পাওয়ায় আমরা পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারছি না। তবে আউটডোর সেবা অব্যাহত রয়েছে। অনুমোদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
Leave a Reply