দিনভর মুষলধারে বৃষ্টি ও উজানের বৃষ্টিতে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে নদ-নদীর পানি। দিনভর বৃষ্টিতে সাধারণ মানুষের চলাচল বিঘ্নিত হলেও শুকিয়ে থাকা খাল, বিল ও জলাশয়গুলোতে ফিরেছে প্রাণ। ফলে বর্ষাকালের রূপ যৌবন ফিরে এসেছে উপজেলার সবুজ প্রকৃতিতে।
সোমবার (১৯ মে) রাত থেকে অবিরাম বর্ষণে সারী, গোয়াইন ও পিয়াইন নদীর পানি বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীগুলোতে বইছে স্রোত।
অপরদিকে বৃষ্টির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের বেড়েছে ভোগান্তি। দিনমজুরদের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে একেবারেই। বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে স্কুল-কলেজে আসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাঁধন কান্তি সরকার জানান, ১৪ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত বন্যার পূর্বাভাস ছিল। বর্তমানে বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। গোয়াইনঘাট উপজেলার তিনটি পয়েন্টে সারী, গোয়াইন ও পিয়াইন নদীর বিপদ সীমার আড়াই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫ মিলিমিটার। আর মঙ্গলবার সকালে সিলেটে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১০১ মিলিমিটার।
এ বছর গোয়াইনঘাট উপজেলায় স্বস্তি ও আনন্দে বোরো ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন কৃষকরা। কোনোরকম প্রতিকূল আবহাওয়ার কবলে পড়তে হয়নি উপজেলার কৃষকদের। মাঠেই ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও শুকিয়ে গোলায় তুলতে পেরেছেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হান পারভেজ রনি জানান, উপজেলায় শতভাগ বোরো ধান কর্তন শেষ। শুধুমাত্র সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদের আওতায় আনুমানিক ৩০ হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা বাকি রয়েছে। বন্যা হলেও কৃষকদের বোরো ধানের ক্ষতি হওয়ার কোনো ধরনের আশঙ্কা নেই।
এদিকে জাফলংয়ে হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢল নেমে পিয়াইন নদীতে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঢলটি পিয়াইন নদী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতে জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টসহ আশপাশের এলাকা দ্রুত প্লাবিত হয়। নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ায় শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এতে আশপাশের বসতি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের বরাতে জানা গেছে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। জাফলংয়ের অধিকাংশ পর্যটন এলাকা ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের পর্যটন কার্যক্রম। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জাফলং টুরিস্ট পুলিশের ইউনিট ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে জাফলংয়ে ডাউকি নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিরাপদে অবস্থান করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশ রয়েছে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়া অব্যাহত রয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে অনেকেই বন্যার আশঙ্কা করছেন।
Leave a Reply