মো. মাহাবুবুর রহমান শাওন একজন প্রযুক্তিপ্রেমী। স্থানীয়দের কাছে পরিচিতি লাভ করেছেন খুদে বিজ্ঞানী হিসেবে। গ্রামীণ জনপদে বেড়ে ওঠা এই মেধাবী তরুণ প্রান্তিক অবস্থানে থেকেও একটার পর একটা উদ্ভাবন করে চলেছেন। আর প্রতিটি উদ্ভাবনের পেছনে রয়েছে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা ও সৃজনশীল চিন্তাধারা। তাই আবারও নতুন উদ্ভাবনের অপেক্ষায় রয়েছেন এই বিস্ময় তরুণ।
এবার সী-প্লেন আর স্মার্ট গ্রিন কার নয়, মেধা মননে সৌরচালিত পার্সোনাল গাড়ি নির্মাণের প্রযুক্তি হাতে নিয়েছেন শাওন, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণসহ চালু করা যাবে গাড়ি। এছাড়া নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে গেলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকেত দেবে এই উদ্ভাবকের ভাবনায় থাকা গাড়ি।পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার সদর ইউপির মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের নাসীর উদ্দীনের ছেলে শাওন। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি নিয়ে খেলার ছলে বেড়ে ওঠা তার। মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন দিয়ে প্রথমবারের মতো ২০১৫ সালে বড় প্রযুক্তিগত সী-প্লেন উদ্ভাবন করলেও প্রশাসনিক অনুমতির অভাবে এটি চালু রাখতে পারেননি তিনি। তবে থেমে যাননি এই তরুণ, এরপরই তৈরি করেন স্মার্ট গ্রিন কার, যা ছিল সম্পূর্ণ জ্বালানি ছাড়াই সৌরচালিত একটি গাড়ি।এর প্রযুক্তি ছিল- মানুষের সামনে এলেই দুর্ঘটনা এড়াতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া, আর চুরি প্রতিরোধে মালিক পক্ষকে কল করে জানিয়ে নিজেকে লক করে ফেলে চোরকে আটকে দেওয়ার সক্ষমতা। এছাড়া স্মার্ট সুইচ, সিকিউরিটি অ্যালার্ম, স্মার্ট ফ্রিজ, স্মার্ট বোট সিস্টেম ও সী-প্লেনের আদলে কুয়াকাটায় আসা পর্যটকদের জন্য বিচ প্লেন তৈরি করে ব্যাপক সাড়া জাগান তিনি, যা গণমাধ্যমে উঠে এলে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সম্প্রতি এই তরুণ উদ্ভাবক সম্পূর্ণ বিকল্প চিন্তাধারায় বাজারজাত করার লক্ষ্যে ভাবছেন সৌরচালিত পার্সোনাল গাড়ি নিয়ে।ইতোমধ্যে নিজেই আধুনিক গাড়ির ডিজাইন, প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার তৈরি করেছেন। এটিতে সংযুক্ত করবেন একাধিক অত্যাধুনিক ফিচার। তবে এই গাড়ি তৈরি হলে চলবে মুখের ভাষার নিয়ন্ত্রণে। যার হর্ন, সিগন্যাল ও হেডলাইট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। একই সঙ্গে ভুল করে সামনে মানুষ চলে এলে বন্ধ হয়ে যাবে গাড়ি। এছাড়া চুরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা, নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিগন্যাল ব্যবস্থা, রিমোর্ট কন্ট্রোল ব্যবস্থা, স্মার্ট ড্যাশবোর্ড ডিসপ্লে ও রিয়ার ক্যামেরা ও নিরাপত্তা রেকর্ডিং ফেস লক-ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিস্টেম থাকবে এই গাড়িতে। এমনকি গাড়ির মালিক ব্যতীত অন্য কারও চালু করার সুযোগও থাকবে না তার উদ্ভাবনে। আর দরজাও খুলবে মালিক এলেই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে।তরুণ এই উদ্ভাবক মাহাবুবর রহমান শাওন জানান, আমার শ্রম ও এই প্রযুক্তিটি যেন সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে যায়। তাই তিনি নিজস্ব উদ্যোগে ধীরে ধীরে গাড়িটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে চান। জ্বালানিবিহীন তিন চাকার এই গাড়িটি তৈরি করতে ইতোমধ্যেই সব প্রস্তুতি নিচ্ছেন শাওন। তবে কিছুটা আর্থিক দীনতায় পিছিয়ে রয়েছেন।
তিনি বলেন, আগের সবকিছুকে ছাপিয়ে যাবে তার এই পার্সোনাল গাড়ি। আল্লাহর রহমতে খুব দ্রুতই কাজটি শুরু করতে চান স্থানীয়দের পরিচিত এই খুদে বিজ্ঞানী।
এ বিষয়ে সরকারি মোজহার উদ্দিন বিশ্বাস অনার্স কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. ইউসুফ আলী বলেন, এই বিস্ময় তরুণ আমাদের এলাকার গর্ব। বিগত দিনে যেসব আবিষ্কার করেছে তা প্রশংসনীয়। এখন নতুন যে চিন্তাধারায় কাজ করছে তা সফল হলে অবশ্যই নতুন কিছু। তবে অদম্য এই মেধাবীকে ধরে রাখতে সামাজিক ও আর্থিকভাবে আমাদের সাপোর্ট করা উচিত।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, বিচে তার একটি আবিষ্কার আমি দেখেছি। এখন নতুন উদ্ভাবন সফল হলে সরকারিভাবে আবেদন করা হবে, যাতে বাজারজাত করতে পারেন। এছাড়া খোঁজ নিয়ে তার পাশে থাকার চেষ্টা থাকবে।
Leave a Reply