প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা সফর এর স্বপ্ন ছিল। একদিন সবাই কে নিয়ে প্রকৃতির বুকে কিছুটা সময় কাটাবো। অবশেষে সেই দিন আসল স্বপ্নই সত্যি হলো ২৪শে মে এক রৌদ্র উজ্জ্বল সকালে। ইক্বারা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত হলো চায়ের কন্যা খ্যাত শ্রীমঙ্গলের চা বাগান, বধ্যভূমি-৭১ ও চিড়িয়াখানা ভ্রমণ। সূর্য উঠার সাথে সাথেই আমরা চলে এলাম ইক্বরা একাডেমি এর ক্যাম্পাসের সামনে। সেখান থেকে গাড়িতে করে সবাই একত্র হয়ে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই । সবারই মন ছিল আনন্দ উত্তেজনায় ভরপুর। শ্রীমঙ্গলে পৌঁছে প্রথম গন্তব্য ছিল বধ্যভূমি -৭১। ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশে অবস্থিত বধ্যভূমি ’৭১ পার্কটি। এটি এখন শ্রীমঙ্গল শহরের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র। ধীর পদক্ষেপে আমরা এগিয়ে গেলাম বধ্যভূমি ’৭১-এর দিকে। সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে গেলাম আমরা। দূর থেকে দেখা পেলাম ঝুলন্ত সেতু। দেখা পেলাম ওই এলাকার প্রবীণ রকিব হাসানের । তিনি বললেন, পাকিস্তান আমলে এই বটগাছের নিচে এক সাধুর আস্তানা ছিল। এখানে চা শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ মানত করত, পূজা দিত। জায়গাটি ‘সাধু বাবার থলি’ নামে পরিচিত ছিল। দৃষ্টিনন্দন এই পুণ্যস্থান আরও পবিত্র হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ৯ মাসে। এই পুণ্যভূমে ঘুমিয়ে আছে শত-সহস্র তাজা প্রাণ। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে এখানে হত্যা করেছে। আমরা নগ্ন পায়ে এগিয়ে গেলাম। দেখা পেলাম ছড়ার পাশে শহীদদের নামফলক। সেখানে কিছু সময় দাঁড়িয়ে আমারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানালাম। ২০১০ সালের শেষ দিকে এই বধ্যভূমিতে নির্মিত হয় স্মৃতিস্তম্ভ বধ্যভূমি ’৭১। এরই ধারাবাহিকতায় এখানে নির্মিত হয় মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য মৃত্যুঞ্জয়ী ’৭১। তা ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়। আমাদের মতো অনেকেই এখানে এসেছেন মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য মৃত্যুঞ্জয়ী ’৭১ দেখতে। আমাদের অনেকেই উচ্ছ্বাসে মুখর হয়ে সময়গুলিকে ক্যামেরা বন্দী করে রাখছে, কেউবা একাগ্র চোখে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেছে।
সে সময় প্রকৃতির নিঃশব্দতা যেন মনটাকে নতুন করে সাজিয়ে দিচ্ছিল । আমরা কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলাম। হালকা বাতাসের শব্দ আর মেঘে ডাকা আকাশ । মনে হলো, এ যেন প্রকৃতির কাছে নিজেকে উযার করে দেওয়ার এক নিঃশব্দ প্রার্থনা।
প্রায় ঘন্পটা দুইয়েক পরে আমরা রওনা হই চিড়িয়াখানা এর উদ্দেশ্যে সেখানে গিয়ে আমরা অনেক প্রজাতি প্রাণী দেখতে পাই। তার মধ্যে অন্যতম ছিল – মেছো বিড়াল,অজগর শাপ,হরিণ,ভাল্লুক, বানর,কচ্ছপ, কাটাশ সহ অনেক প্রজাতিত পশু পাখি।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুহূর্ত ছিল আমাদের এই যাত্রাপথে গান, কবিতা ও কুইজ প্রতিযোগিতার আনন্দে আমরা ছিলাম আত্মহারা। রবিউল, রুমা, শামীম , অসাধারণ গানে সবার মন কেড়েছে। বিশেষ করে কুইজ প্রতিযোগিতায় রবিউল হোসেন,বদরুল আমিন ও মারজানা বেগম যথাক্রমে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অর্জন করে । তা ছাড়া আলিফ কে দেওয়া হয়। বিশেষ পুরুষ্কার ভ্রমণ শেষে বাসে ফেরার পথে কেউ স্মৃতিচারণে ব্যস্ত আর কেউ কেউ গাইছেন নানা ধরনের গান। এই ভ্রমণ শুধু জায়গা দেখা ছিল না, এ ছিল বন্ধন তৈরির এক অদৃশ্য সেতু। সহযাত্রীদের হাসি, সহযোগিতা আর ভালোবাসায় আমরা হয়ে উঠেছিলাম একটি পরিবার।
লেখক: মাসুদ আহমদ শিকদার
শিক্ষকঃ ইক্বরা একাডেমি কাজীগঞ্জ বাজার, নবীগঞ্জ,হবিগঞ্জ
Leave a Reply