মৌলভীবাজারের পাথারিয়া সংরক্ষিত বনে গত এক বছরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বিপন্নপ্রায় প্রজাতির ১১টি প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জুড়ী রেঞ্জের লাঠিটিলায় লজ্জাবতী বানর ৪টি ও চশমরাপরা হনুমান ৩টি এবং বড়লেখা রেঞ্জের মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে ৪টি লজ্জাবতী বানরের মৃত্যু হয়েছে।বছরজুড়ে বন্য প্রাণীর সঙ্গে এমন ঘটনা বারবার ঘটলেও অভিযোগ রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ নিজেদের দায় এড়াতে সামান্য কিছু জায়গায় কাভারযুক্ত তার ব্যবহার করেছে । এছাড়া অধিকাংশ জায়গায়ই কাভার ছাড়া তার ব্যবহারের কারণে বিপন্নপ্রায় এসব প্রাণীর প্রাণহানির ঘটনা বারবার ঘটেছে। বিপন্নপ্রায় প্রাণীর এমন মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন পাথারিয়া বন্য প্রাণী সংরক্ষণ টিম।
সর্বশেষ গত সোমবার (১৯ মে) মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের মূল ফটকের পাশে প্রাপ্তবয়স্ক একটি লজ্জাবতী বানরের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও গত ৩১ মার্চ ও ২৬ এপ্রিল দুইটিসহ গত এক বছরে ১১ টি বিপন্নপ্রায় প্রাণীর প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।বিদ্যুৎ বিভাগ বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর দায় এড়াতে অল্প কিছু জায়গায় প্লাস্টিক মোড়ানো তার দিয়ে লাইনগুলো কাভার করেছে। তবে বনের গুরুত্বপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই লাঠিটিলা ও মধাবকুণ্ড বনের বিপন্নপ্রায় বন্যপ্রাণী শূন্য হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের সদস্য খোর্শেদ আলম বলেন, এসব সংরক্ষিত বন এলাকায় ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী মারা গেছে। এ নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে চিঠির মাধ্যমে সংরক্ষিত বন এলাকায় ইনসুলেটেড (প্রলেপযুক্ত) তারের ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর দায় এড়াতে অল্প কিছু জায়গায় প্লাস্টিক মোড়ানো তার দিয়ে লাইনগুলো কাভার করেছে। তবে বনের গুরুত্বপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই লাঠিটিলা ও মধাবকুণ্ড বনের বিপন্নপ্রায় বন্যপ্রাণী শূন্য হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। পাশাপাশি জীব বৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে।বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের মূল ফটক সংলগ্ন প্রায় শূন্য দশমিক পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে লজ্জাবতী বানরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল। সেখানে রাস্তার পাশ দিয়ে বিদ্যুতের যে খোলা তার রয়েছে, তাতে মাঝে মধ্যেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে লজ্জাবতী বানর।
পরিবেশকর্মী আবিদ হোসাইন বলেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চশমাপরা হনুমান মারা যাওয়ার খবর প্রায়ই পাওয়া যায়। বিদ্যুৎস্পৃষ্টে জুড়ী ও বড়লেখা মিলিয়ে বেশ কয়েকটি চশমাপরা হনুমান মারা গেছে বলে আমি জানি। ২০২৩ সালে বন বিভাগ পল্লী বিদ্যুতের বড়লেখা জোনাল অফিসে আবেদন করেছিল বনের ভেতরের তারগুলো ইনসুলেটেড করার জন্য। কিন্তু নানা অজুহাতে তা বাস্তবায়ন করেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। এভাবে যদি প্রতিনিয়ত বিপন্নপ্রায় প্রাণী মারা যায়, তবে এসব প্রাণী সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হতে সময় লাগবে না। বিপন্নপ্রায় প্রাণীদের রক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
লজ্জাবতী বানর গবেষণা ও সংরক্ষণ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সাবিত হাসান বলেন, লজ্জাবতী বানর হুমকির মুখে পড়ার অন্যতম কারণ হলো– নির্বিচারে বন উজাড়, পাচার, ওষুধ হিসেবে ব্যবহার, খাওয়ার উদ্দেশ্যে হত্যা ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়া। এছাড়াও রাস্তার দু’পাশের গাছের মধ্যকার ডাল (ক্যানোপি) কেটে সংযোগ নষ্ট হওয়ায় চলার পথে বানরের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। এসব ঝুঁকি থেকে লজ্জাবতী বানরসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। বনের মধ্যেকার বিদ্যুতের তার রাবার বা অন্যান্য বিদ্যুৎ অপরিবাহী কিছু দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে। একইসঙ্গে রাস্তার দুই পাশের গাছের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করতে হবে। বন সংরক্ষণে গাছ রোপণে লজ্জাবতী বানরের জন্য গাম বা আঠা উৎপাদনকারী গাছকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে সিলেট বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তা ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত সোমবার লজ্জাবতী বানরটি মারা যাওয়ার ঘটনা স্থানীয় বন বিভাগের কেউ জানেন না। তবে ইতিমধ্যে আমি একাধিকবার পল্লী বিদ্যুৎকে চিঠি দিয়ে বলেছি লাইনগুলো কাভার করার জন্য। তারা জানিয়েছে পর্যায়ক্রমে খোলা তারগুলো ইনসুলেট করবে। আমি বিষয়টি আবার তাদেরকে জানাবো, যেন তারা দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আর কোনো বন্যপ্রাণীর মৃত্যু দেখতে চাই না।
দৈনিক ইনাতগঞ্জ বার্তা/ ইকবাল
Leave a Reply