মাসুদ শিকদারঃ সকাল থেকে বুকে কেমন অস্বস্তি আর ব্যথা। আগের দিন দাওয়াতে ভালোমন্দ খেয়েছেন; ভাবছেন, তাই হয়তো গ্যাস হয়ে এমন লাগছে। এই ভেবে বাড়িতে থাকা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, অ্যান্টাসিড সিরাপ সবই খেলেন। কিন্তু ব্যথা তীব্রতর হচ্ছে, খারাপ লাগছে। শেষ পর্যন্ত গেলেন চিকিৎসকের কাছে। পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস নিয়ে দেখা গেল, ব্যথাটা হার্টের ব্যথার মতো। ইসিজি করার পর আশঙ্কার সত্যতা পাওয়া গেল। জরুরি ভিত্তিতে ভর্তি হলেন হাসপাতালে। এ যাত্রায় বেঁচে গেলেন বটে, তবে বড় ধরনের অঘটন হতেও পারত, এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত ছিল। এ কারণে কোনটি হার্টের ব্যথা আর কোনটি গ্যাসের ব্যথা, তা নিয়ে সচেতন থাকা জরুরি।
গ্যাসের ব্যথার লক্ষ্মণ গ্যাসের সমস্যা বিভিন্ন রকমের হতে পারে। অন্যভাবে বললে, সাধারণ মানুষ পেটের বিভিন্ন অস্বস্তিকে গ্যাসের সমস্যা হিসেবে আখ্যা দেন। গ্যাসের সমস্যায় পেটে হালকা থেকে তীব্র ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে। পেট ভার ভার লাগতে পারে, পেট ফুলে বা ফেঁপে আছে মনে হয়।
অনেকে বলেন, অল্প খেলেই পেটটা ফেঁপে যায়। আবার কেউ বলেন, খাওয়ার পর খাবার ওপর দিকে উঠে আসতে চায়। এসব সমস্যায় ব্যথা হালকা হতে পারে, চিন চিন করতে পারে, জ্বালাপোড়া করতে পারে, আবার তীব্র ব্যথাও হতে পারে। গ্যাসের ব্যথা সাধারণত পেটের ওপরের দিকে হয়। কিন্তু মনে রাখবেন, হার্টের ব্যথাও এই জায়গাতেই হতে পারে। বিশেষ করে ইনফেরিয়র এমআই (মাইয়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন) ধরনের হার্ট অ্যাটাক একই জায়গায় ব্যথা নিয়ে আসতে পারে। গ্যাসের ব্যথা বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হয় না, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার পর উপশম হয়ে যায়। কিন্তু হার্টের ব্যথা তা নয়। এটি গ্যাসের ওষুধে কমবে না এবং বাড়তে থাকবে। গ্যাসের ব্যথা বেশির ভাগ সময়ই খাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। একধরনের গ্যাসের ব্যথা খালি পেটে বাড়ে, আবার আরেক ধরনের গ্যাসের ব্যথা খাওয়ার পর বেড়ে যায়।
হার্টের ব্যথার লক্ষণ। হার্টের ব্যথার একটি নির্দিষ্ট ধরন আছে। হার্টের বাথা সাধারণত বুকের ঠিক মাঝখানে হয়। হার্ট অ্যাটাক বা অস্থিতিশীল অ্যানজিনা হলে হঠাৎ করে ব্যথা শুরু হয়। আবার স্থিতিশীল অ্যানজিনা হলে ধীরে ধীরে ব্যথা ওঠে। বুকের ওপর চাপ দিয়ে আছে, ভার মনে হচ্ছে ব্যথার ধরন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা এভাবে বর্ণনা দেন। ব্যথা বুক থেকে অনেক সময় চোয়াল, ঘাড়ের দিকে, পেটের দিকে বা বাঁ হাতের দিকে নেমে আসতে পারে। এ ধরনের ব্যথা সাধারণত হাঁটলে বা পরিশ্রম করলে বাড়তে থাকে, আবার বিশ্রাম নিলে বা হার্টের একটি বিশেষ ওষুধ জিবের নিচে স্প্রে করলে কমে যায়। তবে সব হার্টের ব্যথা যে এক রকমের হবে, তা নয়। ডায়াবেটিক রোগীদের ব্যথার অনুভূতি তুলনামূলক কম থাকে। তাঁরা ব্যথা উঠলে অনেক সময় বুঝতে পারেন না। যাঁরা খেলাধুলা বা পরিশ্রমে অভ্যন্ত, তাঁরাও অনেক সময় ব্যথা কম অনুভব করেন। করণীয়। বুকে ব্যথা হলে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। সঠিক সময়ে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা পেলে হার্টের সমস্যার বড় ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই ব্যথার লক্ষ্মণ যদি হার্টের ব্যথার সঙ্গে মিলে যায় এবং সেটা যদি বুকের মাঝখানে হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। আবার প্রাথমিকভাবে বুকে গ্যাসের ব্যথার মতো মনে হলে, গ্যাসের ওষুধ খেয়ে ব্যথা না কমলে বা খারাপ লাগা অব্যাহত থাকলেও অবহেলা করবেন না, চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হলে, দ্রুত নিয়ে যেতে হবে।
তবে মনে রাখতে হবে, বুকের সব ব্যথাই হার্টের ব্যথা নয়। গ্যাসের ব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা, অস্থিসন্ধি-অস্থি-তরুণাস্থির ব্যথা, প্যানিক অ্যাটাকেও বুকের মাঝখানে ব্যথা হয়।
Leave a Reply