সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি।। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জুলাই-আগস্টের বিপ্লবসহ দেশের সব গণহ্যাতার বিচার করতে হবে। যাদেরকে গুম করা হয়েছিলো বা এখনও যাদের গুম করে রাখা হয়েছে এই দুইটির অপরাধের বিচার করতে হবে। অন্য বিচার আস্তে আস্তে হোক সেগুলো আমাদের অসুবিধা নাই কিন্তু অগ্রাধিকার দিয়ে এই দুইটি বিচার খুব দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। এটা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য না এই বিচার সমাজকে কলঙ্ক মুক্ত করার জন্য।আজ শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সরকারি জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি আরও বলেন, সারাদেশের কোথায়ও আমাদের নেতাকর্মীরা কোনও জল মহাল বালু মহাল,জলমহাল, অথবা কোনো হাট-বাজারে বা রাস্তাঘাট কোনও কিছুতেই ঝাপিয়ে পড়ছে না। এমন কোনো অভিযোগও নাই। আমাদের নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজির করছে না। আমাদের নেতারাও মামলা বাণিজ্যর করছে না। তারা জানে এগুলো করা হারাম। আমরা যারা রাজনীতি করি সবাই বিশ্বাস করি আমরা দেশকে ভালোবাসি। আমি মনে করি যারা রাজনীতি করে তারা এমন অপকর্মের সাথে জড়িত হবে না। কেউ যদি অপরাধ করে থাকেন, প্লিজ বন্ধুগণ এগুলো জীবন চলে গেলো যারা এই পরিবর্তন এনে দিলো। যেটাকে স্বাধীনতা বলা হচ্ছে, যার কারণে আপনি কথা বলতে পারবেন আমি কথা বলতে পারছি। আরামে একটু ঘুমাতে পারছি। মেহেরবানী করে একটু বন্ধ করুন। তাদের প্রতি একটু সম্মান দেখান। আর কেউ চাঁদাবাজি করবেন না, আর কেউ দখলদারি করবেন না, আর কেউ মামলা বাণিজ্য করবে না। অসহায় মানুষকে মামলায় ঢুকিয়ে হয়রানি করনে না। নিরীহ মানুষ কাউকে হয়রানি করা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা ৫ আগস্টের পর থেকে টানা ১৫ দিন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পাহাড়া দেয়ার জন্য। সকল ধর্মের মানুষের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। গত জালেম সরকার ১০ হাজার রাজাকারের তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকায় ৮০ ভাগ লোকই আওয়ামী লীগের। আমরা যদি ক্ষমতায় যেতে পারি তা হলে আমরা শিক্ষায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিবও শিক্ষায়। আমরা যে আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্হা গড়ে তুলবও সে শিক্ষা হবে কর্মমুখি শিক্ষা। একজন পড়াশোনা শেষ করার সাথে সাথে ঐ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সাটিফিকেট তুলে দেয়া হবে।বলেন, আমি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে ডাক্তার হিসেবে কাজ করেছি। বর্তমানে আয়তনের দিক থেকে অনেক বড়। সুনামগঞ্জ মাছের অভয়আশ্রম। আমাদের দেশের প্রায় ৭৮ শতাংশ মানুষ যে কোনও ভাবে কৃষির সাথে জড়িত।

জামায়াতের আমির ডা.শফিকর রহমান আরও বলেন, আমাদের পেট বন্ধক দিয়েছি অন্য দেশে। মাথাও বন্ধক দিয়েছি কি না আল্লাহ জানেন। দেশের মেধাবীরা দেশ থেকে পড়াশোনার জন্য গেলে আর ফিরে না। কিন্তু দু থেকে আড়াইশ বছর আগেও আমাদের দেশের উপর মোগলরা বৃটিশরা পতূগীজরা ঝাপিয়ে পড়তও ভাগ্য গড়ার জন্য। কিন্তু এখন উল্টো রথ কেন। আমাদের দেশের নেতারা বলে দেশের চেয়ে দল বড়। কিন্তু না আমরা দেখি দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়। ধোঁকাবাজির রাজনীতি যারা করবে তাদের মাধ্যমে দেশের আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়। সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারককে কি আপনারা দেখেছেন কলা পাতায় ঘুমিয়েছেন। এটা তার পরিণতি। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ক্ষমতার অপ ব্যবহার করেছেন।

জামায়াতের আমির আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বলেন, অনেকেই আমাদেরকে পাসপোর্ট ভিসা টিকেট ছাড়াই অমুক দেশে তুমুক দেশে পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু তারাই এখন পালিয়ে গেলও পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া। দুনিয়ার জেলকে আমরা পরোয়া করি না। আমাদের মাথার তাজ পাঁচ জন নেতাকে একে একে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই ফাঁসির দড়ি তাদের কাছে জুতার ফিতার মতও। ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর তারা বলতেন আলহামদুলিল্লাহ। ফাঁসির দিন সন্ধায় পরিবারের লোকজন দেখা করতেন। তখন পরিবারের লোকজনদেরকল সান্ত্বনা দিতেন তারা। সব কিছু সম্পন্ন হওয়ার পর তারা দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তারা স্বেচ্ছায় ফাঁসির তকতায় গিয়ে দাড়াতেন। তারা দুনিয়ার কোনও অপশক্তির কাছে আপস করেন নি। তারা আল্লাহর দরবারে আত্বহুতি দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই আমাদের বেশি বেশি সমালোচনা করুন। সমালোচনা করলে আমাদের কাজের গতি আরও বাড়বে। আমরা যদি ভাল কাজ করতে পারি না তা হলে আমাদেরকে ছেড়ে যাবেন। আমরা জনগণের সমথর্ন নিয়ে ক্ষমতায় যেতে পারলে সুনামগঞ্জকে উন্নয়নের গতিতে এগিয়ে নিয়ে আসা হবে। যদি আমরা ক্ষমতায় যেতে না পারি তা হলে দাবি আদায়ের জন্য আপনাদের সাথে আন্দোলন করে দাবি আদায় করবও উন্নয়নের জন্য।

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক মো. আব্দল্লাহ ও জেলা জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য এড. রেজাউল করিম এর যৌথ সঞ্চালনায় এবং সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা তোফায়েল আহমদ খাঁন এর সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, জামায়াতে ইসলামীর সিলেট মহানগর উত্তরের আমীর ফখরুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর সিলেট জেলা শাখার আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, সিলেট মহানগর শিবির সভাপতি শাহীন আহমেদ, সিলেট জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম আল মাদানি, সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির, মোমতাজুল হাসান আবেদ, নায়েবে আমির এড. মো. শামস উদ্দিন, মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোখলেছুর রহমান, ২৪ এর গণ আন্দোলনে শহীদ সোহাগের পিতা আবুল কালাম প্রমুখ।

দৈনিক ইনাতগঞ্জ বার্তা / ইকবাল