সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রাম ভয়াবহ নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। কালনী নদীর উত্তাল স্রোত যেন ধীরে ধীরে গ্রামটিকে গিলে খাচ্ছে। প্রতিদিন ভেঙে পড়ছে বসতভিটা, একে একে বিলীন হয়ে যাচ্ছে জীবনের সব স্মৃতি।সোমবার (২৬ মে) নদীভাঙনের প্রতিবাদে শান্তিগঞ্জ বাজারে মানববন্ধন করেন মির্জাপুর এলাকার শতাধিক বাসিন্দা। তারা মির্জাপুরসহ আশপাশের গ্রামগুলো রক্ষার দাবি জানান।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় বাসিন্দা জিয়া উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম ও মুসলিম মিয়া প্রমুখ।মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, টানা ভাঙনে ইতোমধ্যে মির্জাপুরের একাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। সর্বশেষ মির্জাপুরের ঐতিহ্যবাহী খেয়াঘাট এলাকার মুচি ও মাঝিদের ঘরবাড়িও কালনী নদীর পেটে চলে গেছে। এই খেয়াঘাট দিয়েই প্রতিদিন শত শত মানুষ নদী পারাপার করতেন। কালনী নদীর মির্জাপুর খেয়াঘাট কেবল একটি পারাপারের স্থান নয়—এটি মানিকপুর, ফতেহপুর, দক্ষিণ হাসনাবাদসহ অন্তত ৪টি গ্রামের মানুষের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। এখান দিয়ে নদী পার হয়ে মানুষ যান নোয়াখালী বাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও দিরাইয়ের দিকে। খেয়াঘাটটি ধ্বংস হয়ে গেলে এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, থেমে যাবে জীবনযাত্রা।
স্থানীয় বাসিন্দা জিয়া উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন চোখের সামনে ঘরবাড়ি নদীতে ভেঙে পড়ছে। খেয়াঘাট চলে গেলে আমরা চলাফেরা করব কীভাবে? একটার পর একটা পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। অথচ সরকার এখনো নিরব। আমরা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই।মুসলিম মিয়া বলেন, এলাকাবাসী বহুবার স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের দাবি, কৃষিকাজের জন্য নদীর দুই পাড়ে বসানো গভীর পাম্প এবং জেলেদের নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারের কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে নদী প্রাকৃতিক পথ ছেড়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, ফলে ভাঙন আরও ভয়াবহ আকার নিচ্ছে।
আব্দুর রশিদ বলেন, দিন দিন নদী যেভাবে ভাঙছে, তাতে মনে হয় আমরা আর বেশিদিন এখানে টিকে থাকতে পারব না। একসময় এই নদী ছিল জীবনের প্রতীক, আর এখন হয়ে উঠেছে দুশ্চিন্তার কারণ। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে টিকেয়ে রাখতে এখনই কার্যকর প্রদক্ষেপ না নিয়ে মির্জাপুর গ্রাম নদীর পেটে চলে যবে।
মানববন্ধন শেষে মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দারা শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে স্মারকলিপি জমা দেন। স্মারকলিপিতে অবিলম্বে নদীভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, মির্জাপুর খেয়াঘাট পুনরুদ্ধার এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি জানানো হয়।
এ বিষয়ে জয়কলস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত সুজন বলেন, “বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। আমরা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।”
এলাকাবাসীর আশঙ্কা, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শুধু মির্জাপুর নয়, আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রাম কালনী নদীর গর্ভে তলিয়ে যাবে। তারা সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন
Leave a Reply